দীর্ঘ ১১ বছর পর আগামী ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এই সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের বিরাজ করছে ব্যাপক উৎসাহ। এবারের সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সাংগঠনিক কার্যক্রম চাঙ্গা করতে নতুন নেতৃত্বের দাবি তৃণমূলেরও। বিভিন্ন উপজেলা কমিটির একাধিক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, কাউন্সিল হলে তাদের সঠিক মূল্যায়ন হবে। কারণ তারা ভোট দিতে পারবেন। সমঝোতা হলে দলের সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেবেন।
২০০৫ সালে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১১ সালে কোনো সম্মেলন ছাড়াই কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির পর সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান ২০১৫ সালে মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান সহসভাপতির দায়িত্বে থাকা অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান। চার বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়েই চলছে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও রয়েছেন। বয়সের ভারে তিনি ন্যূজ। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রমে তিনি ততটা সক্রিয় নন।
নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন চান তারা। বার্ধক্যজনিত কারণে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবার প্রার্থী হবেন না বলে জানা গেছে। এতে করে সভাপতি পদে পরিবর্তন আসার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। পরিবর্তন আসতে পারে সাধারণ সম্পাদক পদে। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী। এবার তিনি সভাপতি হতে ইচ্ছুক। তবে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, নির্বাচন নয়, বরং দলের সভানেত্রীর মাধ্যমে সমঝোতার মাধ্যমেই বাছাই হবে শীর্ষ নেতৃত্ব।
৫ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া যে পদ্ধতিতেই হোক, নতুন নেতৃত্ব আরও গতিশীল করার প্রত্যয় রেখে আলোচনায় আছেন ডজনখানেক নেতা। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য এসব নেতার অনেকেই বিভিন্নভাবে প্রচারণার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের সহানুভূতি পেতে তৎপর রয়েছেন। রাখছেন তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কও।
একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সভাপতি হিসেবে তালিকায় রয়েছেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী। রয়েছেন কমিটির সহসভাপতি, সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস, সহসভাপতি ও সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমেদ, জেলা বারের সাবেক সভাপতি রুহুল আনাম চৌধুরী মিন্টু ও সিলেট-৪ আসনের এমপি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। ২০০৫ সালে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছর কমিটি ঘোষণা করার কথা থাকলেও ২০১১ সালে সম্মেলন ছাড়াই আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ানকে সভাপতি ও শফিকুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৫ সালে সুফিয়ান মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান। চার বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বর্ষীয়ান ওই রাজনীতিক পাশাপাশি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানেরও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সভাপতি
৫ ডিসেম্বরের সম্মেলন সামনে রেখে বুধবার রাতে প্রস্তুতি কমিটিতে লুৎফুর রহমানকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করা হয়েছে সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীকে।
দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে পরিবর্তন আসছে বিভিন্ন পদে। বিশেষ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন হচ্ছে। সিনিয়র সহসভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদেও নতুন কিছু মুখ আসতে পারে। তবে বর্তমান কমিটির বিভিন্ন পদে থাকা অধিকাংশ নেতাই ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগে এসেছেন। এর মধ্যে সভাপতি প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী স্বাধীনতা-উত্তর ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন। ‘৭৫-পরবর্তী সময়ে সিলেটে যে ক’জন নেতা রাজপথে ছিলেন এর মধ্যে তিনি অন্যতম। একসময় শফিক চৌধুরী যুক্তরাজ্যে বসবাস করলেও সেখানে দলকে সুসংগঠিত করার কাজ করেন।
সভাপতি প্রার্থীর তালিকায় বর্তমান কমিটির সহসভাপতি আশফাক আহমদ ও মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমেদ রাজনীতির পাশাপাশি দীর্ঘদিন জণপ্রতিনিধিত্ব করেন। মাসুক উদ্দিন জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। ক্লিন ইমেজ হিসেবে তার সুনামও রয়েছে। অপর সহসভাপতি আশফাক একাধিকবার সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হয়েছেন। আরেক সহসভাপতি ও সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ছাত্রলীগ ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর সম্ভাব্য তালিকায় আছেন- বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি এডভোকেট শাহ ফরিদ আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু জাহিদ ও বর্তমান কমিটির উপ দপ্তর সম্পাদক, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জগলু চৌধুরী। এদের অনেকেই ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে এ পর্যায়ে এসেছেন।
প্রার্থীতা প্রসঙ্গে শাহ ফরিদ আহমদ বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় নেতৃত্ব যদি আমাকে বিবেচনায় নেন, তাহলে প্রতিটি উপজেলায় এমনকি ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে সংঘটিত করতে আমার জীবনের অবশিষ্ট সময় ব্যয় করতে চাই। আর এটাই আমার জীবনের শেষ চাওয়া।’ তিনি এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এড. নাসির উদ্দিন খান বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে এবং প্রত্যেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক গতি বাড়াতে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করেছি, তৃণমূলের গতিশীল রাজনীতি আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থানে নিয়ে এসেছে । দলকে গতিশীল করতে নেত্রী আগামীতে যে দায়িত্ব দেবেন, সেটি পালন করতে উম্মুখ রয়েছি।
সূত্রমতে, ৫ ডিসেম্বরের সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সিলেটের দায়িত্বপাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা আসছেন। ওই দিন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হতে পারে। কাউন্সিল না সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি হবে, বিষয়টি এখনও খোলাসা হয়নি। তবে সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি হওয়ার পাল্লাই ভারী বলে জানা গেছে। সম্মেলনের পর ঢাকা থেকেই নাম ঘোষণা করা হতে পারে, এমন আভাসও দিয়েছেন পদপ্রত্যাশীদের অনেকে।